জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কি এবং জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারে।
প্রাথমিক ধারণাঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কি এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কিভাবে কাজ করে।
জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা জানার পূর্বে প্রথমে আমাদের জানা উচিত জলবিদ্যুৎ বা জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কি এবং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কিভাবে কাজ করে।খরস্রোতা নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে, পানির কৃত্তিম রিজার্ভার তৈরি মাধ্যমে, উচ্চ অঞ্চল থেকে নিম্ন অঞ্চলে পানি প্রবাহ করে, পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে যে প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করার হয় তাকে জলবিদ্যুৎ বলা হয় এবং উক্ত প্রক্রিয়া ব্যবহার করে প্রতিষ্টিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র বা Hydroelectric Power Plant বলা হয়।
একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মূলত পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে প্রাইম মুভার হিসেবে ওয়াটার টারবাইনের ব্লেডে সজোরে আগাত করা হয় যার ফলে টারবাইন ঘোরতে থাকে। ওয়াটার টারবাইনটি আবার তার শ্যাফটের মাধ্যমে একটি জেনারেটর এর সাথে সংযুক্ত থাকে।
পরবর্তীতে জেনারেটর চালু করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রীডের মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করা হয়।
নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে জলবিদ্যুৎ, যার রয়েছে অনেক সুবিধা এবং সাথে রয়েছে অনেক অসুবিধাও। নিম্নে আমরা জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারে জানার চেষ্টা করবো।
জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারেঃ
নিম্নে জলবিদ্যুৎ এর বেশ কয়েকটি সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারে বর্ণনা করা হয়েছে যা সাধারণ এবং প্রকৌশল বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীরা তাদের পরীক্ষার খাতায় অনায়াসে ভালো ফলাফলের আশায় লিখতে পারেন।জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা সমূহঃ
নবায়নযোগ্য শক্তিঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে মূলত পানির প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এবং ইহা একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। এই শক্তির উৎস কখনই শেষ হওয়ার মত নয় অর্থাৎ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি টেকসই শক্তির উৎস দ্বারা পরিচালিত।গ্রীণহাউজ প্রভাবমুক্তঃ অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মত এখানে কয়লা, গ্যাস, ডিজেল, ফার্নেস ওয়েল ইত্যাদি পুড়ানো হয় না, যার কারণে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গত হয় না।
সর্বনিম্ন পরিচালনা খরচঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেহেতু কোন ধরনের জ্বালানির প্রয়োজন হয় না, ফলে জ্বালানি ক্রয় করার জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয় না। ফলশ্রুতিতে, অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের তুলনায় অনেক কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
অধিক নির্ভরযোগ্যঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য যেহেতু জ্বালানির উপর নির্ভর করার প্রয়োজন পড়ে না, সেহেতু এই ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নিরবিচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য অধিক নির্ভরযোগ্য।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে নমনীয়তাঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে খুব সহজেই পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুতের চাহিদার উপর নির্ভর করে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম বা বেশি করার ক্ষেত্রে অধিক নমনীয়তার সুবিধা পাওয়া যায়।
কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতাঃ কোন কোন ক্ষেত্রে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাঁধ নির্মাণ করার মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয় কৃষি জমিতে পানির রিজার্ভার থেকে সেঁচের জন্য পানি সরবরাহ করে কৃষিক্ষেত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সুবিধাও পাওয়া যেতে পারে।
দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহঃ দুর্গম এলাকা যেখানে সাধারণত বৈদ্যতিক গ্রীড লাইন টানা সম্ভব নয়, সেখানে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
দীর্ঘ আয়ুর প্রকল্পঃ সাধারণত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মিত বাঁধের আয়ু ১০০ বছর বা তার বেশী হয়ে থাকে, যার কারণে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি দীর্ঘ আয়ুর প্রকল্প হিসেব বিবেচিত।
পর্যটন কেন্দ্রের সুযোগঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মিত বাঁধের দ্বারা যে জলাশয়ের তৈরি হয় সেখানে নৌকা চালানো, মাছ ধরা, ক্যাম্পিং করা ইত্যাদি বিনোদনমূলক কাজের সুযোগ তৈরির করে পর্যটন কেন্দ্রের সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হওয়ার সুযোগও রয়েছে।
উন্নতমানের পানি নিশ্চিতকরণঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মিত বাঁধের কারণে জমাকৃত পানির মধ্যে থাকা দূষিত পদার্থ এবং পলি জলাশয়ের নিচে আটকা পড়ে, ফলে জলাশয় থেকে নির্গত পানির গুণগত মান তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত থাকে খাবারের জন্য এবং জমিতে সেঁচের জন্য।
আরো পড়ুনঃ ইংরেজি শেখার সহজ উপায় যা কাজ করবে আপনার ক্ষেত্রেও।
জলবিদ্যুৎ এর অসুবিধা সমূহঃ
অধিক নির্মাণ খরচঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে তুলনামূলকভাবে অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে অধিক খরচ হয়ে থাকে। বিশেষকরে বাঁধ নির্মাণ করা অনেক ব্যয়বহুল একটি কাজ।স্বল্প পরিসরে অনুপযোগীঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সাধারণত বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি করা হয়। তাছাড়া, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ খরচ অনেক বেশী সুতরাং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অনুপযোগী।
ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণ অনিশ্চিতঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র একবার নির্মাণ করা হয়ে গেলে তার ক্ষমতা ভবিষ্যতে বৃদ্ধি করা অনেকটা ঝামেলাপূর্ণ। অতএব, বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে এরকম বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অতিরিক্ত ইউনিট যুক্ত করার সুবিধা পাওয়া যায় না।
নির্দিষ্ট এলাকায় সীমাবদ্ধঃ যেহেতু জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এর জন্য প্রয়োজন খরস্রোতা নদী, তাই এরকম নদী যেখানে আছে সেখানেই শুধু এই প্রকল্প নির্মাণ সম্ভব। তাছাড়া, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে অনেক ভূমির প্রয়োজন হয়, সুতরাং জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র যেকোন জায়গায় চাইলেও করা সম্ভব নয়।
মালামাল পরিবহনে অসুবিধাঃ এধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র সাধারণত দুর্গম অঞ্চলে নির্মিত হয়ে থাকে, ফলে জরুরী প্রয়োজনে মেশিনারিজ বা অন্যান্য যন্ত্রাংশ আনা নেওয়া করা অনেকটা ঝামেলাপূর্ণ হয়ে থাকে।
ব্যর্থতার ঝুঁকিঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মিত বাঁধ অনেক জঠিল কাঠামোর হয়ে থাকে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভুল পন্থা অবলম্বন বা অন্যকোন কারণে নির্মাণ কাজ ব্যর্থ হতে পারে।
অপসারণে ঝামেলাঃ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বা বাঁধ নির্মাণের পর তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে বিবেচিত হলে তা পুনরায় আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা বা বাঁধ অপসারণ করা অনেকটা অসম্ভব, কারণ বাঁধ অপসারণ করতে গিয়েও বিশাল পরিমাণের টাকা খরচ করতে হবে।
পরিবেশের উপর প্রভাবঃ যদিও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কোন ধরনের গ্রীণহাউজ গ্যাস নির্গত হয় না, কিন্ত নদীতে বাঁধ নির্মাণ করার কারণে নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় যা পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করা এবং খরা সৃষ্টির জন্য দায়ী হয়ে থাকে।
জলজ প্রাণীর উপর প্রভাবঃ বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীতে থাকা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রানীর আবাস্থলকে প্রভাবিত করতে পারে। নদীর পানির প্রবাহ যান্ত্রিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে তাদের খাদ্য এবং প্রজননের জন্য স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
সামাজিক প্রভাবঃ বাঁধ নির্মাণের দ্বারা প্রকল্পের আশেপাশের এলাকায় সৃষ্ট পরিবেশগত প্রভাবের কারণে অত্র এলাকার লোকজন আস্তে আস্তে নিজেদের স্থানান্তর করতে বাধ্য থাকবে, যা ধ্বংস করতে পারে একটি সম্প্রদায় এবং তাদের দ্বারা লালিত অনেকদিনের পুরনো সংস্কৃতি।
আরো পড়ুনঃ চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম।
আরো পড়ুনঃ ঢাকা মেট্রোরেল নিয়ে রচনা।
উপসংহারঃ
উপরের আর্টিকেল পড়ে আমরা বুঝতে পারলাম যে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে, তেমনি রয়েছে অনেক মারাত্মক প্রভাবও।পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হোক বা অন্য যেকোন প্রকল্প হোক, প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য যদি মানুষের কল্যাণ সাধন করা হয়ে থাকে, তাহলে ঐ নির্দিষ্ট প্রকল্পের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিক বিবেচনা করে প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত।
আবার যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষের উপকার হয় এবং অন্য শ্রেণীর মানুষের অপকার হয়, ঐ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে যারা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের ক্ষতিপূরণের পরিকল্পনা আগে থেকেই করে রাখতে হবে যদি উক্ত প্রকল্প দ্বারা দেশের বিরাট অংশের জনগণের উপকার হয়ে থাকে।
আশাকরছি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কি, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কিভাবে কাজ করে এবং জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারে জানতে পেরেছেন এই আর্টিকেলের মাধ্যমে।
যে বিষয় নিয়ে ছিলো এই আর্টিকেলঃ
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারে, বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর ভালো ও খারাপ প্রভাব, জলবিদ্যুৎ এর অসুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর ভালো প্রভাব, জলবিদ্যুৎ এর খারাপ প্রভাব, পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব।
জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা পয়েন্ট আকারে, বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা ও অসুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর ভালো ও খারাপ প্রভাব, জলবিদ্যুৎ এর অসুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর সুবিধা, জলবিদ্যুৎ এর ভালো প্রভাব, জলবিদ্যুৎ এর খারাপ প্রভাব, পরিবেশের উপর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রভাব।