বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অসুবিধা কি কি পয়েন্ট আকারে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অসুবিধা কি কি তা বর্ণনা করতে গিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

তবে, বিশেষ  চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অসুবিধাগুলো জানার পূর্বে আমাদের অবগত হতে হবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু কারা বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু কাকে বলে

নিম্নে আমরা প্রত্যেকটি বিষয় খুব সহজ ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। অতএব, এই আর্টিকেল দ্বারা পরিপূর্ণ উপকৃত হতে আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার পরামর্শ রইলো।  

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু কাকে বলে?

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়, যাদের শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের বিকাশকে প্রভাবিত করে এবং যাদের অতিরিক্ত সহায়তা বা বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়ে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর এ ধরনের অবস্থা বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে, যেমনঃ অটিজম, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসি, শ্রবণ বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা বা কোন কিছু শেখার অক্ষমতা ইত্যাদি।

এই ধরনের শিশুদের যতটা সম্ভব স্বাধীনভাবে বাঁচতে সক্ষম করতে, অর্থাৎ সাধারণ দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করার জন্য বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা, উপযুক্ত থেরাপি, সহায়ক প্রযুক্তি বা অন্যান্য সহায়তামূলক সেবার প্রয়োজন হতে পারে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের আইকিউ লেভেল সাধারণত ৭০ এর নিচে, আবার ১২০ এর অধিকও হতে পারে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অসুবিধা কি কি?

বিশেষ-চাহিদা-সম্পন্ন-শিশুর-অসুবিধা-কি-কি, bishesh-chahida-somponno-shishu, বিশেষ-চাহিদা-সম্পন্ন-শিশুদের-প্রতিবন্ধকতা
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অসুবিধাগুলো কি কি হতে পারে বা একজন সাধারণ মানুষের মত জীবনযাপন করতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের কি কি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা বুঝাতে নিম্নে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরা হয়েছে।

সীমিত শারীরিক ক্ষমতাঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সেরিব্রাল পালসি, স্পাইনা বিফিডা বা মাসকুলার ডিস্ট্রোফি এর মতো সমস্যার কারণে তাদের শারীরিক ক্ষমতা সীমিত হতে পারে। সেজন্য তাদের কাপড় পরিবর্তন করা, খাবার খাওয়া এবং হাটা চলাফেরা করার ক্ষেত্রে অন্যের সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

যোগাযোগে অসুবিধাঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের কথা বলতে জড়তা, শ্রবণশক্তির স্বল্পতা বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার এর কারণে যোগাযোগ করতে অসুবিধা হতে পারে। এটি তাদেরকে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে হতাশার সৃষ্টি করতে পারে এবং সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে অসুবিধার কারণ হতে পারে।

শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকাঃ জ্ঞানীয় অক্ষমতা বা বুদ্ধিমত্তার অভাবের কারণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের লেখাপড়া করা অনেক চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তাদের পড়াশুনা করতে এবং পড়াশুনার মাধ্যমে সফল হতে সাহায্য করার জন্য বিশেষ শিক্ষা এবং শিক্ষণ পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে।

বৈষম্যের স্বীকারঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা তাদের শারিরিক, অথবা মানসিক অবস্থার কারণে সমাজে বৈষম্যের সম্মুখীন হতে পারে, যা তাদের মধ্যে একাকীত্ব এবং হতাশার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। এমতাবস্থায় তাদের সহযোগিতা করার জন্য মেন্টাল সাপোর্ট এবং কাউন্সেলিং এর প্রয়োজন হতে পারে।


যতেষ্ট সুযোগের অভাবঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের তাদের অবস্থার কারণে সমাজে তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণে সীমিত সুযোগ থাকে, যার ফলে তাদের স্বাধীনতার অভাব এবং অন্যের উপর নির্ভরশীলতা আজীবনই থেকে যায়।

পরিবারের জন্য আর্থিক বোঝাঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের যত্নের জন্য বিশেষ সরঞ্জাম, থেরাপি এবং ঘন ঘন ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয় যা অনেক ব্যয়বহুলও হতে পারে। যার ফলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক বোঝা হতে পারে এবং আর্থিক অভাবের কারণে কোন সময় তাদের পর্যাপ্ত যত্নেরও ঘাটতি থাকতে পারে।

নিয়ন্ত্রণ করা কঠিনঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু তাদের অবস্থার কারণে অনেক সময় তারা আক্রমণাত্মকও হতে পারে, যেমন অন্যদের আঘাত করা অথবা নিজে নিজেকেই আঘাত করার প্রবণতা থাকতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে তাদের পরিবারের পক্ষে বা শিক্ষকদের পক্ষে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হতে পারে।

পরিবহন ব্যবস্থার অভাবঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুলে, অথবা হাসপাতালে ডাক্তার দেখানোর জন্য যাওয়া আসা করতে বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় তাদের পরিবারের জন্য তা যোগাড় করা কঠিন হতে পারে এবং ফলে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গোপনীয়তার অভাবঃ  বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ছেলে হোক অথবা মেয়ে হোক তাদের সকল দৈনন্দিন কাজ, অর্থাৎ গোসল করা, টয়লেট করা, কাপড় পরিবর্তন করা ইত্যাদি সকল পার্সোনাল কাজ করতে অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। যার ফলে একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু বড় হওয়ার পরও তার প্রাইভেসি বা গোপনীয়তার অভাব থাকতে পারে।

জীবন যাত্রার মান হ্রাসঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর সেবা-যত্নের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন পড়ে যা অনেক পরিবারের পক্ষে সামর্থ্য নাও থাকতে পারে। তাছাড়া, এরকম শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য তাদের পিছনে নিয়মিত সময়ও দিতে হয়, যার ফলে শিশুর বাবা-মায়ের যেকোন একজনের অথবা উভয়ের চাকরির করা বা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তা গ্রহণ করা সম্ভব নাও হতে পারে।

অনেক সময় শিশুর এরকম অস্বাভাবিক অবস্থার জন্য বা তাদের সেবা-যত্ন করা প্রসঙ্গে বাবা-মায়ের মধ্যে বা পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হতে পারে। এরকম নানা পরিস্থিতির কারণে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু এবং তার পরিবার উভয় পক্ষের জীবন যাত্রার মান হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ স্বশিক্ষা অর্জনে বই পড়ার গুরুত্ব।
আরো পড়ুনঃ ছদ্মবেশী বেকারত্ব কাকে বলে উদাহরণসহ বর্ণনা। 

পরিশেষে আমরা এটাই বলবো যে, শারীরিক অথবা মানসিক অক্ষতার কারণে কারোর যদি আচরণ অস্বাভাবিক হয় তাহলে সেটা তার অবস্থার জন্য, কিন্তু আমাদের অবস্থা হচ্ছে আমরা সুস্থ। অতএব, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর সাথে খারাপ আচরণ না করে বা তাদেরকে অবহেলা না করে আমরা যদি তাদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করি বা একটু আন্তরিক হতে পারি, তাহলে সেও ভালো থাকবে এবং সাথে আমরাও ভালো থাকবো।

আশাকরি যে, এই আর্টিকেল পড়ে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু কাকে বলে এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর অসুবিধা কি কি। এরকম মূল্যবান আর্টিকেল নিয়মিয় পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট আবারো ভিজিট করার পরামর্শ রইলো। ধন্যবাদ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url