গোপনীয় প্রশ্নোত্তরসহ ডিএনসি কিভাবে করা হয় তা নিয়ে আলোচনা।
ডিএনসি সম্পর্কৃত লেখা আজকের এই আর্টিকেল পড়ে একজন পাঠক যে যে বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবেন তা হলোঃ
- ডিএনসি মানে কি?
- ডিএনসি কেন করা হয়?
- ডিএনসি কিভাবে করা হয়?
- ডিএনসি করলে কি কি সমস্যা হয়?
- ডিএনসি করার কতদিন পর মাসিক হয়?
- ডিএনসি করার কতদিন পর সহ*বাস করা যায়?
ডিএনসি মানে কি?
যেহেতু এই আর্টিকেলে ডিএনসি সম্পর্কৃত বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলাদাভাবে আলোচনা করা হবে, সেহেতু এই অংশে আমরা শুধুমাত্র ডিএনসি কি তা সংক্ষেপে নিম্নে উল্লেখ করছি।ডিএনসি এর পূর্ণনাম হচ্ছে “Dilation and Curettage”, বাংলায় যাকে “প্রসারণ ও কিউরেটেজ” বলা হয়ে থাকে। ডিএনসি হলো একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি, যা সাধারণত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মহিলাদের জরা*য়ুর নীচের অংশ প্রসারিত করা এবং জরা*য়ুর আস্তরণ স্ক্র্যাপিং করার সাথে জড়িত।
ডিএনসি কেন করা হয়?
ডিএনসি সাধারণত মহিলাদের মধ্যে বিভিন্ন স্ত্রীরোগ সংক্রান্ত অবস্থার নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য করা হয়ে থাকে। নিম্নে আমরা কিছু কারণ জানার চেষ্টা করবো, যার জন্য একজন মহিলাকে ডিএনসি করার প্রয়োজন হতে পারে।- অস্বাভাবিক জরা*য়ু রক্ত*পাত হয়ে থাকলে তার অবস্থা নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য ডিএনসি করা যেতে পারে। সাধারণত, বিভিন্ন অবস্থা যেমন হরমোন ভারসাম্যহীনতা, ফাইব্রয়েড, পলিপ বা ক্যান্সারের কারণে জরা*য়ুর অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে।
- গর্ভপাতের পরে মহিলাদের জরা*য়ুতে থাকা অবশিষ্ট টিস্যু অপসারণের জন্য D&C করা যেতে পারে। এটি সংক্রমণ এবং ভারী রক্ত*পাতের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- যদি ক্যান্সারের সন্দেহ করা হয়ে থাকে, তাহলে পরীক্ষার জন্য জরা*য়ুর আস্তরণের একটি নমুনা সংগ্রহের জন্য ডিএনসি করা যেতে পারে। এটি প্রাথমিক পর্যায়ের এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
ডিএনসি কিভাবে করা হয়?
ডিএনসি কিভাবে করা হয় তা বুঝার জন্য চিকিৎসা শাস্ত্রের খুব জটিল পরিভাষা ব্যবহার না করে, আমরা সহজ ভাষায় তা জানার চেষ্টা করবো।
ডিএনসি পদ্ধতি সাধারণত একজন রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যানেসথেশিয়া প্রদান করার মাধ্যমে শুরু করা হয়ে থাকে।
অ্যানেসথেশিয়া দেওয়ার পর একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, রোগীর জরা*য়ুমুখ উনার দৃষ্টিগোচরে আনার জন্য রোগীর যো*নিতে “স্পিকুলাম” নামক একটি মেডিক্যাল টুলস প্রবেশ করাবেন।
এভাবে স্পিকুলামের দ্বারা চিকিৎসক একজন রোগীর জরা*য়ুমুখ ধীরে ধীরে প্রসারিত করার চেষ্টা করবেন, যতক্ষন না পর্যন্ত “কিউরেট” নামক একটি সার্জিকেল টুলস প্রবেশ করানো সম্ভব হয়।
কিউরেট হল অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত একটি লম্বা ও পাতলা যন্ত্র যার সম্মুখভাগ একটি চামচ আকৃতির হয়ে থাকে। কিউরেটরের মাধ্যমে জরা*য়ুর আস্তরণ স্ক্র্যাপিং (ছাঁটানো বা অপসারণ) করা হয়ে থাকে।
ডিএনসি করার সময় একজন গাইনোকোলজিস্ট নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোগীর জরা*য়ুর যেকোন টিস্যু বা উপাদান সংগ্রহ বা অপসারণ করতে কিউরেট ব্যবহার করে থাকেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, গাইনোকোলজিস্ট রোগীর জরা*য়ুর অভ্যন্তরটি ভালোভাবে দেখার জন্য “হিস্টেরোস্কোপ” নামের একটি পাতলা টিউব ব্যবহার করতে পারেন যার সাথে একটি ক্যামেরা ও লাইট সংযুক্ত থাকে।
ডিএনসি করলে কি কি সমস্যা হয়?
ডিএনসি সম্পূর্ণ হওয়ার পরে, একজন রোগীর কিছু রক্ত*পাত হতে পারে, যা খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যপার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া, অ্যানেসথেশিয়া প্রদানের জন্য কোনো জটিলতা বা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না এবং তা নিশ্চিত করার জন্য রোগীকে অল্প সময়ের জন্য পর্যবেক্ষণ করা হবে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ডিএনসি সম্পূর্ণ হওয়ার পর রোগীকে এক দিনের ভিতরে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নেওয়া যায়।
যদিও ডিএনসি করার কারণে বিভিন্ন ঝুঁকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সংক্রমণ, রক্ত*পাত এবং জরা*য়ুর ছিদ্র ইত্যাদি, তারপরও D&C সাধারণত একটি নিরাপদ এবং কার্যকর পদ্ধতি হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
তবে, ডিএনসি করার পূর্বে একজন রোগীর জন্য উচিত হচ্ছে যে, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে ডিএনসি পদ্ধতির ঝুঁকি এবং সুবিধা নিয়ে আলোচনা করা।
ডিএনসি করার কতদিন পর মাসিক হয়?
ডিএনসি করার পরে প্রথম মাসিক কখন হবে তা ডিএনসি করানোর কারণ, রোগীর হরমোনের ভারসাম্য এবং টিস্যু অপসারণের পরিমাণ সহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে হবে।সাধারণভাবে, ডিএনসি করার পর প্রথম পিরিয়ডের জন্য ০৪ থেকে ০৬ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাসিক চক্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।
অপরদিকে, ডিএনসি করার পর কয়েক দিন বা এক সপ্তাহ পর্যন্ত কিছু অনিয়মিত রক্ত*পাত হতে পারে, যেটাকে মাসিকের শুরু হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়।
সঠিক নিরাময় নিশ্চিত করতে এবং মাসিককে প্রভাবিত করতে পারে এমন যেকোনো জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের নির্দেশাবলী অনুসরণ করাও একজন রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ডিএনসি করার কতদিন পর সহ*বাস করা যায়?
ডিএনসি করার পর সহ*বাসের জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা মূলত নির্ভর করে রোগীর ডিএনসি করানোর কারণ এবং রোগ নিরাময় প্রক্রিয়ার উপর।সাধারণভাবে, সহ*বাস পুনরায় শুরু করার জন্য অন্ততপক্ষে এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে, যাতে রোগীর নিরাময় নিশ্চিত এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হয়।
তবে, রোগের জটিলতা বেশি থাকলে দীর্ঘ সময়ের জন্য অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
তাছাড়া, আপনি যদি ডিএনসি করানোর পর খুব তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হওয়ার পরিকল্পনা না করে থাকেন, তাহলে গর্ভনিরোধক ব্যবহার করাও অপরিহার্য। কারণ, ডিএনসি করানোর পর শরীর সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পূর্বে গর্ভবতী হলে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
ডিএনসি করানোর পরে আপনার শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কখন সহ*বাস করা নিরাপদ হবে সে সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন বা উদ্বেগ থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটাই সর্বোত্তম হবে।
আরো পড়ুনঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের কি কি অসুবিধা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ হাঁটুর ব্যথা সারানোর জন্য ঘরোয়া ০৩ টি কার্যকরী উপায়।
আরো পড়ুনঃ হাঁটুর ব্যথা সারানোর জন্য ঘরোয়া ০৩ টি কার্যকরী উপায়।
আরো পড়ুনঃ ল্যাপারোস্কপি কেন করা হয়, কিভাবে করা হয় এবং সার্জারি খরচ কত।
আমাদের মন্তব্যঃ
উপরের আর্টিকেল থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে, ডিএনসি করার কারণ অনেক হতে পারে। তাছাড়া, প্রতিটি মানুষের শারীরিক অবস্থাও একই না হতে পারে।অতএব, রোগের কারণ, রোগীর অবস্থা এবং দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে চিকিৎসার প্রক্রিয়া এবং রোগ নিরাময়ের নির্দেশনার তারতম্য হতে পারে।
আমরা এই আর্টিকেলে ডিএনসি কি এবং ডিএনসি কিভাবে করা হয় তার উপর সাধারণ কিছু আলোচনা করার চেষ্টা করেছি যাতে সর্বস্তরের মানুষ সহজে বুঝতে পারেন। আশা করছি যে, এই আর্টিকেল পড়ে আপনি কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছেন।
ট্যাগঃ ডিএনসি মানে কি, ডিএনসি কেন করা হয়, ডিএনসি কিভাবে করা হয়, ডিএনসি করলে কি কি সমস্যা হয়, ডিএনসি করার কতদিন পর মাসিক হয়, ডিএনসি করার কতদিন পর সহ*বাস করা যায়, DNC কিভাবে করা হয়.