মেঘ কিভাবে সৃষ্টি হয় জানুন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তরসহ।
আপনি যখন একটি সুন্দর দিনে আকাশের দিকে তাকান, তখন আপনি দেখতে পান মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আপনি কি কখনও চিন্তা করে দেখেছেন যে, মেঘ কিভাবে সৃষ্টি হয়? মেঘগুলি একটি চমৎকার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়, যা আমরা আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে খুব সহজেই জানার চেষ্টা করবো।
মেঘ কিভাবে সৃষ্টি হয়ঃ
প্রথমে আপনাকে জানতে হবে যে মেঘগুলি জলের ফোঁটা বা বরফের স্ফটিক দিয়ে গঠিত। এই ফোঁটা এবং স্ফটিকগুলি তৈরি হয়, যখন আর্দ্র বাতাস উপরে উঠে এবং শীতল হয়। মেঘ সৃষ্টির এই প্রক্রিয়াটিকে ঘনীভবন বলা হয়।
বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ মেঘ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন বাতাসে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প থাকে, তখন এটি অধিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এবং এর মানে হল যে মেঘগুলি আরও সহজে তৈরি হতে পারে। তাছাড়া, মেঘ গঠনের পিছনে বায়ুর তাপমাত্রা এবং চাপেরও ভূমিকা রয়েছে।
সূর্যের তাপে পুকুর, নদী এবং সমুদ্রের পানি উত্তপ্ত হয়ে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়ে বাতাসে সঙ্গে মিশে। জলীয় বাষ্প মিশ্রিত এই বাতাস সাধারণ বাতাসের তুলনায় অধিক হালকা হয়ে থাকে, যার ফলে ইহা খুব সহজেই উপরের দিকে প্রসারিত হতে সক্ষম হয়।
জলীয় বাষ্প মিশ্রিত এই আর্দ্র বাতাস উপরে উঠার সাথে সাথে উপরে অবস্থিত শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ইহা তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে যায়। যখনই ইহা শীতল হতে থাকে, তখন আস্তে আস্তে ইহা আর্দ্রতা ধরে রাখতে অক্ষম হয়ে পড়ে, যার ফলে বাতাসের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ছোট ছোট ফোঁটা বা স্ফটিকে পরিণত হয়।
সৃষ্ট এই ছোট ছোট জলের ফোঁটা বাতাসের মধ্যে ভাসমান বিভিন্ন ধরনের কণা, যেমনঃ ধূলিকণা, লবন কণা ইত্যাদির সাথে মিশে বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ারে চূড়ান্তভাবে মেঘে রূপান্তরিত হয় যা আমরা সাধারণত আকাশে দেখে থাকি।
মেঘ থেকে আমরা কিভাবে বৃষ্টি পাই?
আমরা জানতে পেরেছি যে, আকাশে যখন মেঘ তৈরি হয়, তখন ইহা পানির ক্ষুদ্র ফোঁটা দিয়ে তৈরি হয়। এই ফোঁটাগুলি একত্রিত হয়ে বড় ফোঁটা তৈরি করতে পারে, যা অবশেষে খুব ভারী হয়ে গেলে মাধ্যাকর্ষণের ফলে বৃষ্টি হিসাবে মাটিতে পড়ে।মেঘের কণাগুলো যখন মাটিতে পড়তে থাকে, তখন ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যদি হিমাংকের নিচে থাকে, তাহলে তুষারপাত হয়। আর যদি তাপমাত্রা হিমাংকের চেয়ে বেশি হয়, তাহলে মেঘের কণাগুলো গলে যায় এবং বৃষ্টিপাত হয়। সুতরাং, বুঝতে পারলাম মেঘ থেকে আমরা কিভাবে বৃষ্টি পাই।
কোন মেঘ থেকে বজ্রপাত হয়?
বজ্রঝড় হল এক ধরনের আবহাওয়ার ঘটনা যা বিভিন্ন ধরনের মেঘের মধ্যে ঘটতে পারে, তবে এগুলি সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সাথে সম্পৃক্ত। এই মেঘগুলি উচ্চতায় অনেক লম্বা এবং ঘন হয়ে থাকে যা সাধারণত ১০ মাইল বা ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে এবং প্রায়শই বজ্রপাতের আগে, বজ্রপাতের সময় বা বজ্রপাতের পরে এই মেঘগুলির উপস্থিতি দেখা যায়।তাছাড়া, অন্যান্য ধরণের মেঘ যেমন কিউমুলাস ক্লাউড এবং স্ট্র্যাটোকুমুলাস ক্লাউডও বজ্রঝড় সৃষ্টি করতে পারে, তবে এরকম ঘটনা কিউমুলোনিম্বাস মেঘের তুলনায় সাধারণত খুব কমই হয়ে থাকে।
কোন মেঘ থেকে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে?
শিলাবৃষ্টি সাধারণত কিউমুলোনিম্বাস মেঘ থেকে তৈরি হয়। মেঘের মধ্যে থাকা আপড্রাফ্টগুলি শিলাবৃষ্টিগুলিকে ধরে রাখে, যাতে তারা আরও জলের ফোঁটা এবং বরফের স্ফটিকগুলির সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে অধিক বড় হতে পারে। শিলাবৃষ্টিগুলি যখন বড় হতে হতে খুব ভারী হয়ে যায়, তখন আপড্রাফ্টের পক্ষে তাদের ধরে রাখা সম্ভব হয় না এবং পরবর্তীতে তারা মাটিতে পড়ে যেতে পারে।পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় কোথায়?
বিশ্বের সর্বোচ্চ গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত হয় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মেঘালয় রাজ্যের একটি গ্রাম নাম হচ্ছে মৌসিনরাম। মৌসিনরামের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১১,৮৭২ মিলিমিটার (৪৬৭.৪ ইঞ্চি)। মৌসিনরামে ভারী বৃষ্টিপাত হয় খাসি পাহাড়ে তার অবস্থানের কারণে এবং বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর আর্দ্রতা প্রাপ্তির কারণে।আরো পড়ুনঃ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর কি কি অসুবিধা হতে পারে?